বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পের উত্থান: ইতিহাস, প্রভাব ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

🧵 বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের আবির্ভাব: ইতিহাস ও বিশ্লেষণ

History of Bangladesh Garments Industry
History of Bangladesh Garments Industry

🔹 ১. সূচনা পর্ব (১৯৭০-এর দশক)

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর একটি অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থায় ছিল। উন্নয়নমুখী শিল্পের ঘাটতি ও কর্মসংস্থানের অভাব দেশের অগ্রগতিকে ব্যাহত করছিল। এই সময়ে রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে তৈরি পোশাক (RMG) খাত গুরুত্ব পেতে শুরু করে।

১৯৭৮ সালে ‘দেসা গার্মেন্টস’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের গার্মেন্টস শিল্পের যাত্রা শুরু হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ান ‘দেইউ কর্পোরেশন’ সহযোগিতায় প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা আধুনিক পদ্ধতিতে পোশাক উৎপাদন শুরু করেন।

🔹 ২. অগ্রদূত নুরুল কাদের খান ও দেসা গার্মেন্টসবাংলাদেশি উদ্যোক্তা নুরুল কাদের খান গার্মেন্টস শিল্পে এক বিপ্লব আনেন।

তিনি: দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৩০ জন বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠান,আধুনিক প্রযুক্তি ও উৎপাদন কৌশল দেশে প্রয়োগ করেন।

এই উদ্যোগ ভবিষ্যতের শত শত কারখানার জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে।

🔹 ৩. প্রসার ও বিস্তার (১৯৮০–৯০ দশক) সরকার গার্মেন্টস খাতে কর ছাড়, ব্যাঙ্ক ঋণ, সহজ আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করে।

১৯৮৩ সালে গঠিত হয় BGMEA (বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন)।

১৯৯০ সালের মধ্যে শত শত গার্মেন্টস কারখানা চালু হয়ে যায়।

📈 ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে গার্মেন্টস রপ্তানি ছিল মাত্র ৩১ মিলিয়ন ডলার; ১৯৯০-এর মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার।

🔹 ৪. নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক পরিবর্তন

গার্মেন্টস খাত নারীদের কর্মসংস্থানের বড় ক্ষেত্র হয়ে ওঠে:

শ্রমিকদের ৮০% এর বেশি নারী,

গ্রাম থেকে শহরে নারীর আগমন ও আর্থিক স্বাধীনতা,

নারীর সামাজিক অবস্থান ও আত্মবিশ্বাসের অগ্রগতি।

👉 তবে, বেতন বৈষম্য, নিরাপত্তাহীনতা ও দীর্ঘ সময় কাজ করার চাপ রয়ে গেছে।

🔹 ৫. বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ (চীনের পর),রপ্তানি আয়ের ৮০%+ গার্মেন্টস খাত থেকে আসে।

তবে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো মোকাবিলা করতে হচ্ছে:

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি (২০১৩)-এর পর আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাপ,

শ্রমিক নিরাপত্তা ও পরিবেশগত টেকসইতা,

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা (ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া)।


🎯 উপসংহার:

গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ ও নারীর ক্ষমতায়নে এক বিশাল পরিবর্তন এনেছে। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়—একটি ছোট উদ্যোগ কিভাবে কোটি মানুষের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।

আজকের দিনে এ খাতের টেকসই উন্নয়ন ও মানবিক দৃষ্টিকোণ নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

Post a Comment

Previous Post Next Post